কানাডাকে আইনি সহযোগিতা দিতে ভারতকে যুক্তরাজ্যের আহ্বান

ভারত ও কানাডার মধ্যকার কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও গভীর হওয়ার প্রেক্ষাপটে অটোয়ার আইনি প্রক্রিয়ায় দিল্লির সহযোগিতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাজ্য। বুধবার (১৬ অক্টোবর) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কানাডার বিচার ব্যবস্থার ওপর তাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে এবং কানাডার আইনি প্রক্রিয়ায় ভারতের সহযোগিতা করা পরবর্তী সঠিক পদক্ষেপ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
সোমবার কানাডার পুলিশ জানায়, ভারতীয় এজেন্ট ও কানাডায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে জুন ২০২৩ সালে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। এছাড়া, কানাডায় বসবাসরত ভারতীয় ভিন্নমতাবলম্বীদের টার্গেট করার জন্য দিল্লির বৃহত্তর পরিকল্পনা রয়েছে বলে অভিযোগ আনে তারা।
কানাডার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ভারত পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কানাডার ছয়জন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। যাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারও রয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা কানাডায় চলমান স্বাধীন তদন্তের গুরুতর বিষয়ে আমাদের কানাডিয়ান অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কানাডার বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। ভারত সরকারের জন্য কানাডার আইনি প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করাই পরবর্তী সঠিক পদক্ষেপ হবে।
এই বিবৃতির আগে মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মধ্যে ফোনালাপ হয়। ডাউনিং স্ট্রিটের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, দুই নেতা কানাডায় তদন্তাধীন অভিযোগ নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করেন এবং আইনের শাসনের গুরুত্বের বিষয়ে একমত হন। তারা তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি জানান, তিনি কানাডার ফাইভ আইজ গোয়েন্দা সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সমর্থন জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া ফাইভ আইজের অন্তর্ভুক্ত। তবে যুক্তরাজ্যকে এই ইস্যুতে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। কারণ দেশটির ভারতীয় বাজারে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।
নিউ জিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স এক বিবৃতিতে জানান, তিনি বিচারিক প্রক্রিয়া নিজস্ব গতিতে এগোতে দেবেন। কানাডায় তদন্তাধীন অভিযোগের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তিনি জানান, কানাডার আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের প্রকাশ করা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তা উদ্বেগজনক হবে।
মঙ্গলবারের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, এটি গুরুতর অভিযোগ এবং আমরা চাই যে, ভারত এগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেবে এবং কানাডার তদন্তে সহযোগিতা করবে। তবে তারা ভিন্নপথ বেছে নিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, অস্ট্রেলিয়া কানাডায় তদন্তাধীন অভিযোগ নিয়ে আমাদের উদ্বেগ স্পষ্ট করেছে এবং কানাডার বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মঙ্গলবারের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ভারত-কানাডার কূটনৈতিক বিরোধ নিয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি।
কানাডার পুলিশের সাম্প্রতিক অভিযোগগুলোর কারণে ফাইভ আইজ সহযোগী দেশগুলোর জন্য এই বিষয়টি উপেক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কানাডার পুলিশ দাবি করছে, ভারতীয় কূটনীতিকরা অপরাধী চক্রের সঙ্গে মিলে কানাডার দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার পরিকল্পনা করেছে। এর ফলে হত্যাকাণ্ড, বাড়িতে হামলা, গাড়ি থেকে গুলি চালানো ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে।
ভারতীয় সরকারের একজন কর্মচারীর যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়েছে, যা গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত হয়। এতে আরও উল্লেখ করা হয় যে হরদীপ সিং নিজ্জারকেও টার্গেট করা হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যের নিজস্ব কূটনৈতিক বিরোধও রয়েছে, যা জাগতার সিং জোহালের আটকের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। জোহাল ২০১৭ সাল থেকে ভারতের কারাগারে রয়েছেন এবং মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন। ২০২২ সালে জাতিসংঘের ইচ্ছাকৃত আটককরণ বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ জোহালের আটকের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অক্টোবর ২০২৩ সালে একটি বিবৃতিতে জানায়, ৪১ জন কানাডিয়ান কূটনীতিককে বহিষ্কারের চেষ্টা ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন।