জাহাজে ৭ জনকে হত্যা করেছে ইরফান, দাবি র্যাবের

চাঁদপুরে মেঘনায় সারবাহী কার্গো জাহাজ এমভি আল বাখেরার সাত স্টাফকে চেতনানাশক কিছু খাইয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে নৌপুলিশ। এদিকে একই দাবি করছে র্যাবও। এই ঘটনায় আকাশ মন্ডল ওরফে ইরফান নামে একজনকে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১ এর সদস্যরা।
এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে হাইমচর থানায় অজ্ঞাত ডাকাত দলের বিরুদ্ধে মামলা করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মোর্শেদ। ওই মামলার এজাহারে তিনি এই আকাশ মন্ডল ওরফে ইরফানের নাম উল্লেখ করেন। এতে বলা হয়, আহত জুয়েল জানিয়েছেন, জাহাজে নবম ব্যক্তি হিসেবে ইরফানও ছিল।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ থেকে আকাশ মন্ডল ইরফান জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াসহ সবাইকে হত্যা করে। ইরফান জাহাজের সুকানির সঙ্গে ইঞ্জিনরুমে কাজ করতো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফানের দেওয়া তথ্যমতে র্যাব আরও দাবি করে, জাহাজের বাজার করার জন্য ইরফান পাবনার একটি বাজারে নেমেছিল। সেখান থেকে তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কেনে। আর যে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সেটি আগেই জাহাজেই ছিল। কুড়ালটি জাহাজের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছিল। আগের দিন রাতের খাবার রান্নার সময় ইরফান জাহাজের বাবুর্চির অগোচরে খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। সেই খাবার খেয়ে সবাই অচেতন হয়ে পড়লে হাতে গ্লাভস পরে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মাস্টারসহ সবাইকে হত্যা করে। ঘটনা যাতে জানাজানি না হয় সে জন্য ইরফান মাস্টারসহ সবাইকে হত্যা করে।
সংস্থাটির দাবি, যখন সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করে তখন জাহাজ মাঝ নদীতে নোঙর করা ছিল। পরে সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজে জাহাজ চালিয়ে হাইমচর এলাকায় এসে অন্য ট্রলার দিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে, নৌপুলিশ বলছে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পেলেও ক্রাইম সিন দেখে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ নিহতদের সবার লাশ নিজ নিজ ঘুমের ঘরে পাওয়া গেছে। যেন সবাই ঘুমাচ্ছে। সবার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জাহাজে কাউকে আক্রমণ করলে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করবে, চিৎকার করলে অন্যরা রক্ষা করতে আসবে- কিন্তু এখানে তেমন মনে হচ্ছে না। এ অবস্থায় সবদিক মাথায় রেখে কাজ করছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো।
ইতোমধ্যেই জেলা পুলিশ, নৌপুলিশ, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের স্বজন ও নৌযান শ্রমিকদের দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আগামী দুই দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ২০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবি করেছেন নৌযান শ্রমিকরা। তা না হলে সারা দেশে ২৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে কর্মবিরতির মাধ্যমে নৌপথ বন্ধ রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।